কোরবানি করার সময় মুখে নিয়ত করা ও দোয়া উচ্চারণ করা জরুরি নয়। যদি মনে মনে চিন্তা করে নিয়ত করে এবং মুখে শুধু ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করে তবুও কোরবানি জায়েজ হয়ে যাবে।
কুরবানি যাদের ওপর ওয়াজিব :
(অর্থাৎ ১০ জিলহজের ফজর থেকে ১২ জিলহজের সন্ধ্যা পর্যন্ত পারিবারিক
প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বাদ দিয়ে কোনো ব্যক্তি যদি ‘নেসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (শরিয়তের ভাষায় নেসাব পরিমাণ মাল বলা হয়,সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ কিংবা তৎসম মূল্যেরসম্পত্তি।) কিন্তু ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও যদি কোরবানি করে, তবে নফল কোরবানির জন্য অনেক সওয়াব পাবে।
মাসয়ালা :
কোরবানি শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব
হয়। এমনকি নাবালেগ সন্তান যদি ধনী হয়, তবুও
তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। যদি কেউ সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি করতে চায় তবে তা
নফল কোরবানি হবে। কিন্তু নাবালেগের সম্পদ থেকে কিছুতেই কোরবানি করবে না।
মাসয়ালা : কোনো প্রবাসী প্রবাস থেকে
কোরবানির জন্য নিজ দেশে টাকা পাঠালে প্রবাসে তার জন্য আর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে
সেখানেও কোরবানি দিতে চাইলে অসুবিধা নেই।
মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি :
মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি করা জায়েজ।
এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির রূহে সওয়াব পৌঁছে। তবে জীবিত ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব
হয়ে থাকলে, নিজের নামে না করে বাবা-মা বা অন্য
কারো নামে অথবা মৃত ব্যক্তির নামে করলে নিজের ওপর অর্পিত ওয়াজিব আদায় হবে না বরং
ওয়াজিব কোরবানি আদায় না করার গুনাহ হবে। তদ্রুপ ওয়াজিব কোরবানি আদায় না করে ওই
টাকা দান করে দিলে ওয়াজিব আদায় না করার গোনাহ হবে। তবে হ্যাঁ, কোনো এলাকায় যদি বেশি অভাব থাকলে, কোরবানির পশু
কেনার ক্ষেত্রে টাকা কম ব্যয় করে বাকী টাকা দান করে দিতে পারবে।
কুরবানির সময় :
১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজের সন্ধ্যা
পর্যন্ত এ তিন দিন কোরবানি করার সময়। কিন্তু প্রথম দিন সর্বাপেক্ষা উত্তম,
তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন।
পশু জবাই :
নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতেই জবাই করা
মোস্তাহাব। যদি নিজে জবাই করতে না পারে, তবে
অন্যের দ্বারা জবাই করবে, কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা
ভালো। কোরবানিদাতা নারীর পর্দার ব্যাঘাত হয় বলে- যদি সামনে উপস্থিত না থাকতে পারে,
তবে তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
মাসয়ালা :
কোরবানি করার সময় মুখে নিয়ত করা ও দোয়া
উচ্চারণ করা জরুরি নয়। যদি মনে মনে চিন্তা করে নিয়ত করে এবং মুখে শুধু ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করে তবুও
কোরবানি জায়েজ হয়ে যাবে।
ভাগে কোরবানি প্রসঙ্গ :
গরু, মহিষ ও উট এই তিন প্রকার পশুর এক একটিতে এক থেকে সাতজন পর্যন্ত শরিক হয়ে
কোরবানি করতে পারবে। এখানে শরিক জোড়-বেজোড় করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
তবে কোরবানি জায়েজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- কারো অংশ যেন সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম
না হয় এবং কারো যেন গোশত খাওয়ার নিয়ত না হয়। সবার যেন কোরবানির নিয়ত থাকে। অবশ্য
যদি কারো আকিকার নিয়ত হয়, তবে তাও জায়েজ আছে। কিন্তু যদি শুধু
গোশত খাওয়ার নিয়ত হয়, কোরবানি বা আকিকার নিয়ত না হয়, তবে কারো কোরবানি জায়েজ হবে না। এভাবে যদি শুধু একজনের অংশ সাত ভাগের এক
ভাগের চেয়ে কম হয়, তবে সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে।
মাসয়ালা :
যদি গরু ক্রয় করার সময় অন্যকে শরিক
করার ইচ্ছা না থাকে, একা একাই কোরবানি করার
নিয়ত থাকে, পরে অন্যকে শরিক করতে চায় এমতাবস্থায় যদি ওই
ক্রেতা গরিব হয় অর্থাৎ তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব না হয়, তবে
পরে সে অন্য কাউকেও শরিক করতে পারবে না, একা একাই পশুটি
কোরবানি করতে হবে। আর যদি ওই ক্রেতা ধনী হয় অর্থাৎ তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়,
তবে ইচ্ছা করলে পরে অন্য শরিকও মিলাতে পারবে। (তবে নেককাজে যতটুকু
পারা যায় জায়েজ থাকলেও নিয়ত পরিবর্তন না করাই ভালো।)
কোরবানির গোশত বন্টন :
কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ
নিজের,
একভাগ আত্মীয়স্বজনের ও এক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া
মোস্তাহাব। কোরবানির চামড়া বা তার নগদ অর্থ গরিব-দুঃখীদের দান করে দিতে হবে। (এ
ব্যাপারে বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত এতিম, অসহায়
ও গরিব শিক্ষার্থীদের খেয়াল করা উচিত। কারণ তারা এর মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষা অর্জনে
বিশেষভাবে উপকৃত হয়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষদেরও দেয়া যেতে
পারে।)