আপনার কেনা ডিভাইসটি অরিজিনাল না ক্লোন

ক্লোন বা রেপ্লিকা মোবাইল সম্পর্কে শুনেছেন নিশ্চয়ই। ইদানীং কালে এ ধরণের পণ্যের বিষয়ে প্রায়শই শোনা যাচ্ছে। স্বল্প আয় এবং নানা ধরণের সামাজিক চর্চার কারণেই আমাদের দেশের মানুষের সস্তা পণ্যের প্রতি আকর্ষণ অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। আর এই সুযোগেই ঢাকা শহরসহ সারা দেশের প্রযুক্তি পণ্যের দোকানগুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে রেপ্লিকা ফোন।

বর্তমান সময়ে কিছু সংখ্যক ক্রেতা রেপ্লিকা ফোনের ব্যাপারে জেনে-বুঝেই এ ধরণের ফোন বা ট্যাবলেট পিসি কিনছেন।
কিন্তু এদের মধ্যে প্রতারিত হয়েছেন এবং হচ্ছেন, এমন ক্রেতার সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। প্রশ্ন হলো, কিভাবে বুঝবেন আপনার ব্যবহৃত ফোনটি আসল কিনা? শুরুতে আসুন, এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করি।

ক্লোন বা রেপ্লিকা ফোনগুলো হলো কোন একটি নির্দিষ্ট মডেলের প্রতিলিপি। সাধারণত তুলনামূলক দামী এবং জনপ্রিয় মডেলগুলোরই ক্লোন তৈরী করা হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, রেপ্লিকা হ্যান্ডসেটগুলো দেখতে ঐ নির্দিষ্ট মডেলের মত হলেও এর গুণগত মান বা কার্যক্ষমতা আসলটির মত হয় না; বরং তারচেয়ে অনেক নিম্নমানের হয়ে থাকে। ফলে, একটি রেপ্লিকা ফোন থেকে আপনি কখনোই ভাল পারফরম্যান্স আশা করতে পারেন না। বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায়, কেনার পর কয়েকদিন ভাল চললেও কয়েকদিন পরেই হ্যান্ডসেটটিতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

 এর মূল কারণ হচ্ছে, রেপ্লিকা ফোনে ব্যবহৃত বেশিরভাগ হার্ডওয়্যার এবং যন্ত্রাংশগুলো খুবই সস্তা মানের হয়ে থাকে। ধরুন, স্যামসাং ব্র্যান্ডের একটি আসল ফোনে যে প্রসেসর, র্যা ম বা যে মানের ক্যামেরা ব্যবহার হয়, এরই মত দেখতে একটি রেপ্লিকা ফোনে কিন্তু কখনোই তা থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই আসল ফোনের তুলনায় রেপ্লিকা ফোনের দামও অনেক কম হয়। ক্রেতা ভাবতে পারেন, কম দামে অন্তত একটা সুন্দর ফোন কিনতে পারছি। কিন্তু ঐ দামে কেনা অন্য যে কোন অরিজিনাল ফোনের সার্ভিস নিঃসন্দেহে রেপ্লিকা ফোনের চেয়ে ভাল হবে; এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন। আর সচেতন মানুষ হিসেবে আপনার বুঝতে অসুবিধা হবার কথা না, বিশ্বের যে কোন দেশেই এ ধরণের পণ্য তৈরী এবং বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ। ভেবে দেখুন, জেনে-বুঝে কেন একটা বেআইনী কাজে নিজেকে জড়াবেন?


এবার চলুন আমাদের মূল প্রসঙ্গে। একটি রেপ্লিকা ফোন কিভাবে চিনবেন? নিচে রেপ্লিকা ফোন সনাক্ত করার কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছি।
অরিজিনাল বা রেপ্লিকা ফোন চেনার প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে আইএমইআই (IMEI) কোড ভেরিফিকেশন। IMEI শব্দটির পূর্ণরূপ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি। প্রতিটি ফোনের একটি স্বতন্ত্র আইএমইআই কোড আছে যাতে ফোনের ব্র্যান্ড, মডেল নাম্বার, অবমুক্তির তারিখ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু আপনার মোবাইলের স্বতন্ত্র আইএমইআই কোডটি কোথায় পাবেন? অনেক ভাবেই এই কোডটি আপনি খুঁজে বের করতে পারেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ উপায়টি হলো আপনার মোবাইলের ডায়াল বক্সে গিয়ে *#06# লিখুন। এছাড়াও মোবাইলের ব্যাক-কভারটি খুলে ফেললে ব্যাটারীর নিচে আইএমইআই কোডটি দেয়া থাকে। এ সময়ে আরেকটি ছোট্ট পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। মোবাইলের ডায়াল বক্সে *#06# লিখে যে কোডটি পেলেন তার সাথে ব্যাটারীর নিচে দেয়া কোডটি মিলিয়ে দেখুন; দুটো একই কোড কিনা। অনেক ক্লোন পণ্যের ক্ষেত্রেই এই দুটো সংখ্যা আলাদা হতে পারে। যদি আলাদা হয়, তাহলে সে মোবাইল বা ট্যাবলেটটি একটি রেপ্লিকা পণ্য।


দ্বিতীয়ত, ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি বিচার করেও একটি ফোনের অরিজিনালিটি পরীক্ষা করা যায়। সেক্ষেত্রে পণ্যটি সম্পর্কে আপনার একটু ভাল জানাশোনা থাকতে হবে। তাই কোন পণ্য কেনার আগে তার ব্র্যান্ড ওয়েবসাইট বা অন্যান্য সাইট থেকে নির্বাচিত পণ্য, এতে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার সম্পর্কে যতটা পারেন তথ্য সংগ্রহ করুন। সাধারণ যে বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে পরীক্ষা করবেন, এদের মধ্যে পণ্যের নির্মাণ উপকরণ অন্যতম। এছাড়াও মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট পিসি কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি নজর দেয়া দরকার এমন বিষয়গুলো হচ্ছে- ফোনের বডি কি প্লাষ্টিকের না মেটালিক, এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতার মাপ এবং ওজন,স্ক্রীণের আকার, ডিসপ্লেটিতে কি ধরণের গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে, ব্র্যান্ড নেইমের বানান বা লোগো উপস্থাপন, সেন্সরগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা, বডিতে থাকা সবগুলো ফিজিক্যাল বাটন ঠিক অনুপাতে আছে কিনা ইত্যাদি। সম্ভব হলে একই ব্র্যান্ড এবং মডেলের একটি অরিজিনাল সেট বা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন।

সকল বাহ্যিক দিক দেখা শেষ হয়ে গেলে ফোন বা ট্যাবলেটের ফার্মওয়্যার এবং সফটওয়্যারগুলোও পরীক্ষা করে দেখুন। খেয়াল করুন সেটটিতে এ্যান্ড্রয়েড, আইওএস বা উইন্ডোজের যে ভার্সন ব্যবহার হবার কথা সেটাই আছে কিনা। ক্লোন আইফোনে কিন্তু কখনোই আইওএস অপারেটিং সিস্টেম পাবেন না। আপনার কেনা আইফোনটিতে যদি আইটিউনস্-এর বদলে বাই ডিফল্ট গুগল প্লে দেয়া থাকে, তাহলে নিশ্চিত হয়ে যেতে পারেন এটি ক্লোন। একটি-দুটি ছবি তুলে স্ত্রীণ এবং ক্যামেরা রেজ্যুলিউশনটা একটু খুঁটিয়ে পরীক্ষা করুন। সম্ভব হলে ফোনে গুগল প্লে থেকে অন্টুটু বেঞ্চমার্ক নামে একটি মোবাইল এ্যাপ ডাউনলোড করে দেখতে পারেন। এটি আপনার ডিভাইসটি সংক্রান্ত বেশ কিছু জরুরী তথ্য প্রদান করতে পারবে। এছাড়াও ফোনের নিজস্ব সেটিংসের এ্যাবাউট ফোন বাটনটি থেকেও ফোন সংক্রান্ত জরুরী কিছু তথ্য পেতে পারেন।

মোটামুটিভাবে বলা যায়, এ সকল পরীক্ষাগুলোতে আপনার নির্বাচনকৃত ডিভাইসটি ঠিকঠাক পাশ করে গেলে এটি একটি অরিজিনাল ডিভাইস। তবে এ সকল পরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ এ পরীক্ষাগুলোর ওপরই নির্ভর করছে আপনার কিনতে চাওয়া ডিভাইসটি ভবিষ্যতে কেমন সার্ভিস দেবে।
ফেইজবুকে আমিঃ Click Here

Previous Post Next Post
//luvaihoo.com/4/4226258