এমন একটা সময় ছিল ঢালিউডে, যে সময়ে কোন নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়া মানেই, ওরা তিন জনের যে কেউ থাকবেই। যদিও সে সময় আর বর্তমান সময়ের মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে চলচ্চিত্র শিল্পে।
আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়ায় হারিয়েছে ওরাও। মুনমুন, ময়ূরী এবং পলি এখন কোথায় — এমন কৌতুল অতীত দর্শকের অনেকের মধ্যেই আছে। পরিচিত জন যারা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের কাছে এসব কৌতুহলী দর্শকরা জানতে চান তারা এখন কে কোথায় আছেন। ক’দিন আগে একজন ফেসবুক ইনবক্সে জানতে চাইলেন, মুনমুন কোথায় আছে – ঢাকা নাকি বিদেশে।
তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, তিনি কি বুঝাতে চাইলেন। বললেন, এদেশের নায়িকারা যখন আর পর্দায় থাকেন না, কর্মহীন হয়ে পড়েন ইন্ডাষ্ট্রিতে তখন তারা বিদেশ চলে যান কাজের খোঁজে। অথবা বিয়ে করে সংসারী হন, যা বেশিদিন টেকেনা। টিকলেও সেটা থাকে নানা গুজব গুঞ্জনে ভরপুর। এসব কারণে তারা পত্র-পত্রিকায় অহরহ আসতে থাকেন। কিন্তু কোনও দিক থেকেই তিনি তার কৌতুহল মিটাতে পারছিলেন না। তাই প্রশ্নটির অবতারণা করেছেন।
অতীতের সাড়া জাগানো, পর্দা কাঁপানো, লাস্য-রসে এবং আদিম আচরণে বিনোদন পিয়াসী দর্শকের তৃঞ্চা মেটানো নায়িকাদের হাল-হকিকত জানার কৌতুহল এমনিভাবে অনেকের মধ্যেই আছে। অনেকেই জানতে চান অশ্লীল বাণিজ্যিক ছবির যৌনাবেদনময়ী বা মশলা ছবির প্রধান উপাদান এসব নায়িকারা এখন কি করছেন এবং কোথায় আছেন।
কৌতুলী দর্শকের এই কৌতুহলকে সম্বল করে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে জানা গেল, মুনমুন আশুলিয়ায় নিজের বাড়িতেই আছেন। সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে দু’বার বিয়ে করেছেন। দুই ঘরে তার দুটি ছেলে সন্তানও আছে। মুনমুনের সন্তান ভাগ্য অনুকুলে থাকলেও স্বামী ভাগ্য তেমন একটা সুখকর নয়। দুই স্বামীই তাকে ত্যাগ করেছে। তার মাও মুনমুনকে নিয়ে স্বামীর ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ভাগ্যের সন্ধানে।
মেয়ে মুনমুন সংসারের হাল ধরবে এমন একটা বাসনা নিয়ে তিনি চিত্রজগতে মেয়েকে নিয়ে আসেন। এহতেশামের মৌমাছি ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে মুনমুনের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু মৌমাছি ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে কেউ সিনেমায় নিতে চাইলো না। তখন তিনি নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। মন্দ ছবির সিঁড়ি বেয়ে মুনমুন উপরের দিকে যেতে থাকেন। এ সময়ই তিনি অশ্লীল ছবির নায়িকা হিসেবে অভিযুক্ত হন।
মুনমুন যখন চলচ্চিত্র জগতের মধ্য গগনে তখন চলচ্চিত্রে একই শ্রেণীর ছবিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন চলচ্চিত্রের জুনিয়র শিল্পী সেতুর মেয়ে ময়ূরী। তাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন মাহমুদ নামে একজন প্রযোজক। ছবির পরিচালক ছিলেন কবি আবুল হাসানের ছোট ভাই প্রয়াত আবিদ হাসান বাদল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি নির্মিত হলেও ময়ূরী ছবিটিতে ছিলেন না। তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন রাজা নামের একটি ছবি দিয়ে। এরপর তিনি ক্যারিয়ার সজীব রাখার জন্য এমন একটি ঘরানার প্রযোজকদের ছবিতে জড়িত হতে থাকেন যারা কখনও ভালো ছবি নির্মাণ করেন না। ময়ূরী অর্থ উপার্জন করেছেন সে সময় অনেক এবং মগবাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এখন তিনি সেই ফ্ল্যাটেই আছেন। সংসার করছেন এবং তার একটি কন্যা সন্তান আছে। পলি এসেছেন মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত ফায়ার ছবি দিয়ে।
এ ছবিটির শুটিং হয় ব্যাংককে। তখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে, তিনি ব্যাংককের নগ্ন বারে নগ্ন হয়ে অভিনয় করেছেন। অভিযোগ উঠলেও ছবিতে সে দৃশ্য দেখা যায়নি। কিন্তু ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা পলি কখনোই মূলধারার সুস্থ ছবির নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি। অশ্লীলতার অভিযোগে এই তিন নায়িকার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। অশ্লীলতার বিরুদ্ধে প্রশাসন যখন কঠোর হয়ে উঠে তখনই ধীরে ধীরে তিন জনের ক্যারিয়ারে ভাটা পড়তে শুরু করে। তাদের নিয়ে যেসব প্রযোজকরা ছবি বানাতেন তারা প্রশাসনের ভয়ে এ ব্যবসা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে অন্যদিকে সরে যান। পলি জানান, তিনি এখন গুলশানে নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন। পলি অভিনীত প্রায় একশ’ তেরটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। তিনি জানান, তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন। দুটি যমজসহ তার চার সন্তান রয়েছে। চলচ্চিত্রে আর অভিনয় ইচ্ছা নাই তার।
পক্ষান্তরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে মুনমুনের। কিন্তু তাকে নিয়ে লগ্নী করার মতো কোনও প্রযোজক নেই। বর্তমানে তিনি দেশে ও বিদেশে স্টেজ প্রোগ্রাম করেন। সেখান থেকেই তার জীবিকা আসে।